Sohoj Bangla Banan Niom


       সহজ বাংলা বানান নিয়ম

 

 

১. দূরত্ব বোঝায় না এরূপ শব্দে উ-কার যোগে দুর’ (‘দুরউপসর্গ) বা দু+রেফহবেযেমনদুরবস্থা, দুরন্ত, দুরাকাঙ্ক্ষা, দুরারোগ্য, দুরূহ, দুর্গা, দুর্গতি, দুর্গ, দুর্দান্ত, দুর্নীতি, দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, দুর্নাম, দুর্ভোগ, দুর্দিন, দুর্বল, দুর্জয় ইত্যাদি
২. দূরত্ব বোঝায় এমন শব্দে ঊ-কার যোগে দূরহবেযেমনদূর, দূরবর্তী, দূর-দূরান্ত, দূরীকরণ, অদূর, দূরত্ব, দূরবীক্ষণ ইত্যাদি
৩. পদের শেষে ‘-জীবীঈ-কার হবেযেমনচাকরিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী, কৃষিজীবী, আইনজীবী ইত্যাদি
৪. পদের শেষে ‘-বলি’ (আবলি) ই-কার হবেযেমনকার্যাবলি, শর্তাবলি, ব্যাখ্যাবলি, নিয়মাবলি, তথ্যাবলি ইত্যাদি
৫. স্টএবং ষ্টব্যবহার: বিদেশি শব্দে স্টব্যবহার হবেবিশেষ করে ইংরেজি st যোগে শব্দগুলোতে স্টব্যবহার হবেযেমনপোস্ট, স্টার, স্টাফ, স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, স্ট্যাটাস, মাস্টার, ডাস্টার, পোস্টার, স্টুডিও, ফাস্ট, লাস্ট, বেস্ট ইত্যাদিষত্ব-বিধান অনুযায়ী বাংলা বানানে ট-বর্গীয় বর্ণে ষ্টব্যবহার হবেযেমনবৃষ্টি, কৃষ্টি, সৃষ্টি, দৃষ্টি, মিষ্টি, নষ্ট, কষ্ট, তুষ্ট, সন্তুষ্ট ইত্যাদি
৬. পূর্ণএবং পুন’ (পুনঃ/পুন+রেফ/পুনরায়) ব্যবহার : পূর্ণ’ (ইংরেজিতে Full/Complete অর্থে) শব্দটিতে ঊ-কার এবং র্ণ যোগে ব্যবহার হবেযেমনপূর্ণরূপ, পূর্ণমান, সম্পূর্ণ, পরিপূর্ণ ইত্যাদিপুন’ (পুনঃ/পুন+রেফ/পুনরায়ইংরেজিতে Re- অর্থে) শব্দটিতে উ-কার হবে এবং অন্য শব্দটির সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবহার হবেযেমনপুনঃপ্রকাশ, পুনঃপরীক্ষা, পুনঃপ্রবেশ, পুনঃপ্রতিষ্ঠা, পুনঃপুন, পুনর্জীবিত, পুনর্নিয়োগ, পুনর্নির্মাণ, পুনর্মিলন, পুনর্লাভ, পুনর্মুদ্রিত, পুনরুদ্ধার, পুনর্বিচার, পুনর্বিবেচনা, পুনর্গঠন, পুনর্বাসন ইত্যাদি
৭. পদের শেষে’-গ্রস্থনয় ‘-গ্রস্তহবেযেমনবাধাগ্রস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত, হতাশাগ্রস্ত, বিপদগ্রস্ত ইত্যাদি
৮. অঞ্জলি দ্বারা গঠিত সকল শব্দে ই-কার হবেযেমনঅঞ্জলি, গীতাঞ্জলি, শ্রদ্ধাঞ্জলি ইত্যাদি
৯. কেএবং ‘-কেব্যবহার: প্রশ্নবোধক অর্থে কে’ (ইংরেজিতে Who অর্থে) আলাদা ব্যবহার হয়যেমনহৃদয় কে? প্রশ্ন করা বোঝায় না এমন শব্দে ‘-কেএক সাথে ব্যবহার হবেযেমনহৃদয়কে আসতে বলো
১০. বিদেশি শব্দে ণ, , ষ ব্যবহার হবে নাযেমনহর্ন, কর্নার, সমিল (করাতকল), স্টার, আস্‌সালামু আলাইকুম, ইনসান, বাসস্ট্যান্ড ইত্যাদি
১১. অ্যা, এ ব্যবহার: বিদেশি বাঁকা শব্দের উচ্চারণে অ্যাব্যবহার হয়যেমনঅ্যান্ড (And), অ্যাড (Ad/Add), অ্যাকাউন্ট (Account), অ্যাম্বুলেন্স (Ambulance), অ্যাসিস্ট্যান্ট (Assistant), অ্যাডভোকেট (Advocate), অ্যাকাডেমিক (Academic), অ্যাডভোকেসি (Advocacy) ইত্যাদিঅবিকৃত বা সরলভাবে উচ্চারণে হয়যেমনএন্টার (Enter), এন্ড (End), এডিট (Edit) ইত্যাদি
১২. ইংরেজি বর্ণ S-এর বাংলা প্রতিবর্ণ হবে এবং sh, -sion, -tion শব্দগুচ্ছে হবেযেমনসিট (Seat/Sit), শিট, (Sheet), রেজিস্ট্রেশন (Registration), মিশন (Mission) ইত্যাদি
১৩. আরবি বর্ণ ش (শিন)-এর বাংলা বর্ণ রূপ হবে এবং ث (সা), س (সিন) ও ص (সোয়াদ)-এর বাংলা বর্ণ রূপ হবে ث (সা), س (সিন) ও ص (সোয়াদ)-এর উচ্চারিত রূপ মূল শব্দের মতো হবে এবং বাংলা বানানের ক্ষেত্রে ব্যবহার হবেযেমনসালাম, শাহাদত, শামস্‌, ইনসান ইত্যাদিআরবি, ফারসি, ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষা থেকে আগত শব্দসমূহে ছ, ণ ও ষ ব্যবহার হবে না
১৪. শ ষ স :
তৎসম শব্দে ষ ব্যবহার হবেখাঁটি বাংলা ও বিদেশি শব্দে ষ ব্যবহার হবে নাবাংলা বানানে ব্যবহারের জন্য অবশ্যই ষত্ব-বিধান, উপসর্গ, সন্ধি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবেবাংলায় অধিকাংশ শব্দের উচ্চারণে বিদ্যমানএমনকি দিয়ে গঠিত শব্দেও উচ্চারণ হয়’-এর স্বতন্ত্র উচ্চারণ বাংলায় খুবই কম’-এর স্বতন্ত্র উচ্চারণ হচ্ছেসমীর, সাফ, সাফাইযুক্ত বর্ণ, ঋ-কার ও র-ফলা যোগে যুক্তধ্বনিতে ’-এর উচ্চারণ পাওয়া যায়যেমনসৃষ্টি, স্মৃতি, স্পর্শ, স্রোত, শ্রী, আশ্রম ইত্যাদি
১৫. সমাসবদ্ধ পদ ও বহুবচন রূপী শব্দগুলোর মাঝে ফাঁক রাখা যাবে নাযেমনচিঠিপত্র, আবেদনপত্র, ছাড়পত্র (পত্র), বিপদগ্রস্ত, হতাশাগ্রস্ত (গ্রস্ত), গ্রামগুলি/গ্রামগুলো (গুলি/গুলো), রচনামূলক (মূলক), সেবাসমূহ (সমূহ), যত্নসহ, পরিমাপসহ (সহ), ত্রুটিজনিত, (জনিত), আশঙ্কাজনক, বিপজ্জনক (জনক), অনুগ্রহপূর্বক, উল্লেখপূর্বক (পূর্বক), প্রতিষ্ঠানভুক্ত, এমপিওভুক্ত, এমপিওভুক্তি (ভুক্ত/ভুক্তি), গ্রামভিত্তিক, এলাকাভিত্তিক, রোলভিত্তিক (ভিত্তিক), অন্তর্ভুক্তকারণ, এমপিওভুক্তকরণ, প্রতিবর্ণীকরণ (করণ), আমদানিকারক, রফতানিকারক (কারক), কষ্টদায়ক, আরামদায়ক (দায়ক), স্ত্রীবাচক (বাচক), দেশবাসী, গ্রামবাসী, এলাকাবাসী (বাসী), সুন্দরভাবে, ভালোভাবে (ভাবে), চাকরিজীবী, শ্রমজীবী (জীবী), সদস্যগণ (গণ), সহকারী, আবেদনকারী, ছিনতাইকারী (কারী), সন্ধ্যাকালীন, শীতকালীন (কালীন), জ্ঞানহীন (হীন), দিনব্যাপী, মাসব্যাপী, বছরব্যাপী (ব্যাপী) ইত্যাদিএ ছাড়া যথাবিহিত, যথাসময়, যথাযথ, যথাক্রমে, পুনঃপুন, পুনঃপ্রকাশ, পুনঃপরীক্ষা, পুনঃপ্রবেশ, পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বহিঃপ্রকাশ শব্দগুলো একত্রে ব্যবহার হয়
১৬. বিদেশি শব্দে ই-কার ব্যবহার হবেযেমনআইসক্রিম, স্টিমার, জানুয়ারি, ফ্রেরুয়ারি, ডিগ্রি, চিফ, শিট, শিপ, নমিনি, কিডনি, ফ্রি, ফি, ফিস, স্কিন, স্ক্রিন, স্কলারশিপ, পার্টনারশিপ, ফ্রেন্ডশিপ, স্টেশনারি, নোটারি, লটারি, সেক্রেটারি, টেরিটরি, ক্যাটাগরি, ট্রেজারি, ব্রিজ, প্রাইমারি, মার্কশিট, গ্রেডশিট ইত্যাদি
১৭. উঁয়ো (ঙ) ব্যবহার যোগে কিছু শব্দএক্ষেত্রে অনুস্বার (ং) ব্যবহার করা যাবে নাযেমনঅঙ্ক, অঙ্কন, অঙ্কিত, অঙ্কুর, অঙ্গ, অঙ্গন, আকাঙ্ক্ষা, আঙ্গুল/আঙুল, আশঙ্কা, ইঙ্গিত, উলঙ্গ, কঙ্কর, কঙ্কাল, গঙ্গা, চোঙ্গা/চোঙা, টাঙ্গা, ঠোঙ্গা/ঠোঙা, দাঙ্গা, পঙ্‌ক্তি, পঙ্কজ, পতঙ্গ, প্রাঙ্গণ, প্রসঙ্গ, বঙ্গ, বাঙালি/বাঙ্গালি, ভঙ্গ, ভঙ্গুর, ভাঙ্গা/ভাঙা, মঙ্গল, রঙ্গিন/রঙিন, লঙ্কা, লঙ্গরখানা, লঙ্ঘন, লিঙ্গ, শঙ্কা, শঙ্ক, শঙ্খ, শশাঙ্ক, শৃঙ্খল, শৃঙ্গ, সঙ্গ, সঙ্গী, সঙ্ঘাত, সঙ্গে, হাঙ্গামা, হুঙ্কার
১৮. অনুস্বার (ং) ব্যবহার যোগে কিছু শব্দএক্ষেত্রে উঁয়ো (ঙ) ব্যবহার করা যাবে নাযেমনকিংবদন্তী, সংজ্ঞা, সংক্রামণ, সংক্রান্ত, সংক্ষিপ্ত, সংখ্যা, সংগঠন, সংগ্রাম, সংগ্রহ, সংগৃহীত
[
দ্রষ্টব্য: বাংলা ও বাংলাদেশ শব্দ দুটি অনুস্বার (ং) দিয়ে লিখতে হবেবাংলাদেশের সংবিধানে তাই করা হয়েছে।]
১৯. কোণ, কোন ও কোনো’-এর ব্যবহার:
কোণ : ইংরেজিতে Angle/Corner (∠) অর্থে
কোন : উচ্চারণ হবে কোন্বিশেষত প্রশ্নবোধক অর্থে ব্যবহার করা হয়যেমনতুমি কোন দিকে যাবে?
কোনো : ও-কার যোগে উচ্চারণ হবেযেমনযেকোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও
২০. বাংলা ভাষায় চন্দ্রবিন্দু একটি গুরুত্বপূর্ণ বর্ণচন্দ্রবিন্দু যোগে শব্দগুলোতে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করতে হবে; না করলে ভুল হবেঅনেক ক্ষেত্রে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার না করলে শব্দে অর্থের পরিবর্তন ঘটেএ ছাড়া চন্দ্রবিন্দু সম্মানসূচক বর্ণ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়যেমনতাহাকে>তাঁহাকে, তাকে>তাঁকে ইত্যাদি
২১. ও-কার: অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়া পদ এবং বিশেষণ ও অব্যয় পদ বা অন্য শব্দ যার শেষে ও-কার যুক্ত না করলে অর্থ অনুধাবনে ভ্রান্তি বা বিলম্ব সৃষ্টি হতে পারে এমন শব্দে ও-কার ব্যবহার হবেযেমনমতো, হতো, হলো, কেনো (ক্রয় করো), ভালো, কালো, আলো ইত্যাদিবিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া ও-কার ব্যবহার করা যাবে নাযেমনছিল, করল, যেন, কেন (কী জন্য), আছ, হইল, রইল, গেল, শত, যত, তত, কত, এত ইত্যাদি
২২. বিশেষণবাচক আলি প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হবেযেমনসোনালি, রুপালি, বর্ণালি, হেঁয়ালি, খেয়ালি, মিতালি ইত্যাদি
২৩. জীব, -জীবী, জীবিত, জীবিকা ব্যবহারযেমনসজীব, রাজীব, নির্জীব, চাকরিজীবী, পেশাজীবী, জীবিত, জীবিকা
২৪. অদ্ভুত, ভুতুড়ে বানানে উ-কার হবেএ ছাড়া সকল ভূতে ঊ-কার হবেযেমনভূত, ভস্মীভূত, বহির্ভূত, ভূতপূর্ব ইত্যাদি
২৫. হীরা ও নীল অর্থে সকল বানানে ঈ-কার হবেযেমনহীরা, হীরক, নীল, সুনীল, নীলক, নীলিমা ইত্যাদি
২৬. নঞর্থক পদগুলো (নাই, নেই, না, নি) আলাদা করে লিখতে হবেযেমনবলে নাই, বলে নি, আমার ভয় নাই, আমার ভয় নেই, হবে না, যাবে না
২৭. অ-তৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে ই-কার ব্যবহার হবেযেমনসরকারি, তরকারি, গাড়ি, বাড়ি, দাড়ি, শাড়ি, চুরি, চাকরি, মাস্টারি, মালি, পাগলামি, পাগলি, বোমাবাজি, দাবি, হাতি, বেশি, খুশি, হিজরি, আরবি, ফারসি, ফরাসি, ইংরেজি, জাপানি, জার্মানি, ইরানি, হিন্দি, সিন্ধি, ফিরিঙ্গি, সিঙ্গি, ছুরি, টুপি, দিঘি, কেরামতি, রেশমি, পশমি, পাখি, ফরিয়াদি, আসামি, বেআইনি, কুমির, নানি, দাদি, বিবি, চাচি, মাসি, পিসি, দিদি, বুড়ি, নিচু
২৮. ত্ব, তা, নী, ণী, সভা, পরিষদ, জগৎ, বিদ্যা, তত্ত্ব শব্দের শেষে যোগ হলে ই-কার হবেযেমনদায়িত্ব (দায়ী), প্রতিদ্বন্দ্বিতা (প্রতিদ্বন্দ্বী), প্রার্থিতা (প্রার্থী), দুঃখিনী (দুঃখী), অধিকারিণী (অধিকারী), সহযোগিতা (সহযোগী), মন্ত্রিত্ব, মন্ত্রিসভা, মন্ত্রিপরিষদ (মন্ত্রী), প্রাণিবিদ্যা, প্রাণিতত্ত্ব, প্রাণিজগৎ, প্রাণিসম্পদ (প্রাণী) ইত্যাদি
২৯. ঈ, ঈয়, অনীয় প্রত্যয় যোগ ঈ-কার হবেযেমনজাতীয় (জাতি), দেশীয় (দেশি ), পানীয় (পানি), জলীয়, স্থানীয়, স্মরণীয়, বরণীয়, গোপনীয়, ভারতীয়, মাননীয়, বায়বীয়, প্রয়োজনীয়, পালনীয়, তুলনীয়, শোচনীয়, রাজকীয়, লক্ষণীয়, করণীয়
৩০. রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না৷ যেমনঅর্চনা, অর্জন, অর্থ, অর্ধ, কর্দম, কর্তন, কর্ম, কার্য, গর্জন, মূর্ছা, কার্তিক, বার্ধক্য, বার্তা, সূর্য৷
৩১. ভাষা ও জাতিতে ই-কার হবেযেমনবাঙালি/বাঙ্গালি, জাপানি, ইংরেজি, জার্মানি, ইরানি, হিন্দি, আরবি, ফারসি ইত্যাদি
৩২. ব্যক্তির ‘-কারী’-তে (আরী) ঈ-কার হবেযেমনসহকারী, আবেদনকারী, ছিনতাইকারী, পথচারী, কর্মচারী ইত্যাদিব্যক্তির ‘-কারীনয়, এমন শব্দে ই-কার হবেযেমনসরকারি, দরকারি ইত্যাদি
৩৩. প্রমিত বানানে শব্দের শেষে ঈ-কার থাকলে গণ যোগে ই-কার হয়যেমনসহকারী>সহকারিগণ, কর্মচারী>কর্মচারিগণ, কর্মী>কর্মিগণ, আবেদনকারী>আবেদনকারিগণ ইত্যাদি
৩৪. বেশিএবং ‘-বেশীব্যবহার: বহু’, ‘অনেকঅর্থে ব্যবহার হবে বেশিশব্দের শেষে যেমনছদ্মবেশী, প্রতিবেশী অর্থে ‘-বেশীব্যবহার হবে
৩৫. ’-এর সাথে স্বরচিহ্ন যোগ হলে হবেযেমনজগৎ>জগতে জাগতিক, বিদ্যুৎ>বিদ্যুতে বৈদ্যুতিক, ভবিষ্যৎ>ভবিষ্যতে, আত্মসাৎ>আত্মসাতে, সাক্ষাৎ>সাক্ষাতে ইত্যাদি
৩৬. ইক প্রত্যয় যুক্ত হলে যদি শব্দের প্রথমে অ-কার থাকে তা পরিবর্তন হয়ে আ-কার হবেযেমনঅঙ্গ>আঙ্গিক, বর্ষ>বার্ষিক, পরস্পর>পারস্পরিক, সংস্কৃত>সাংস্কৃতিক, অর্থ>আর্থিক, পরলোক>পারলৌকিক, প্রকৃত>প্রাকৃতিক, প্রসঙ্গ>প্রাসঙ্গিক, সংসার>সাংসারিক, সপ্তাহ>সাপ্তাহিক, সময়>সাময়িক, সংবাদ>সাংবাদিক, প্রদেশ>প্রাদেশিক, সম্প্রদায়>সাম্প্রদায়িক ইত্যাদি
৩৭. সাধু থেকে চলিত রূপের শব্দসমূহ যথাক্রমে দেখানো হলো: আঙ্গিনা>আঙিনা, আঙ্গুল>আঙুল, ভাঙ্গা>ভাঙা, রাঙ্গা>রাঙা, রঙ্গিন>রঙিন, বাঙ্গালি>বাঙালি, লাঙ্গল>লাঙল, হউক>হোক, যাউক>যাক, থাউক>থাক, লিখ>লেখ, গুলি>গুলো, শুন>শোন, শুকনা>শুকনো, ভিজা>ভেজা, ভিতর>ভেতর, দিয়া>দিয়ে, গিয়া>গিয়ে, হইল>হলো, হইত>হতো, খাইয়া>খেয়ে, থাকিয়া>থেকে, উল্টা>উল্টো, বুঝা>বোঝা, পূজা>পুজো, বুড়া>বুড়ো, সুতা>সুতো, তুলা>তুলো, নাই>নেই, নহে>নয়, নিয়া>নিয়ে, ইচ্ছা>ইচ্ছে ইত্যাদি
৩৮. হয়তো, নয়তো বাদে সকল তো আলাদা হবেযেমনআমি তো যাই নি, সে তো আসে নি ইত্যাদি
[
দ্রষ্টব্য: মূল শব্দের শেষে আলাদা তো ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হবে।]
৩৯. ঙ, , , , ং বর্ণের পূর্বে ঁ হবে নাযেমনখান (খাঁ), চান, চন্দ (চাঁদ), পঞ্চ, পঞ্চাশ (পাঁচ) ইত্যাদি
৪০. -এর, -এ ব্যবহার:
=
[> চিহ্নিত শব্দ/বাক্য বা উক্তির সাথে সমাসবদ্ধ রূপযেমনগুলিস্তান ভাসানী হকি ষ্টেডিয়াম’-এর সাইনবোর্ডে স্টেডিয়াম বানানটি ভুল
=
[> শব্দের পরে যেকোনো প্রতীকের সাথে সমাসবদ্ধ রূপযেমনবিসর্গ (ঃ )-এর সঙ্গে স্বরধ্বনি কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গসন্ধি বলে
=
[> বিদেশি শব্দ অর্থাৎ বাংলায় প্রতিবর্ণীকরণ নয় এমন শব্দের সাথে সমাসবদ্ধ রূপযেমন— SMS-এর মাধ্যমে টাকা পাঠাতে হবে
=
[> গাণিতিক শব্দের সাথে সমাসবদ্ধ রূপযেমন৫-এর চেয়ে ২ কম
=
[> সংক্ষিপ্ত শব্দের সাথে সমাসবদ্ধ রূপযেমনঅ্যাগ্রো কোম্পানি লি.-এর সাথে চুক্তি
এ ছাড়া পৃথক রূপে ব্যবহার করা যাবে নাযেমনবাংলাদেশ-এর না লিখে বাংলাদেশের, কোম্পানি-এর না লিখে কোম্পানির, শিক্ষক-এর না লিখে শিক্ষকের, স্টেডিয়াম-এ না লিখে স্টেডিয়ামে, অফিস-এ না লিখে অফিসে লিখতে হবে
৪১. বিসর্গ (ঃ ) ব্যবহার:
বিসর্গ একটি বাংলা বর্ণএটি কোনো চিহ্ন নয়বর্ণ হিসেবে ব্যবহার করতে হবেবিসর্গ (ঃ) হলো অঘোষ হ্‌’-এর উচ্চারণে প্রাপ্ত ধ্বনি’-এর উচ্চারণ ঘোষ কিন্তু বিসর্গ (ঃ)-এর উচ্চারণ অঘোষবাংলায় ভাষায় বিস্ময়াদি প্রকাশে বিসর্গ (ঃ )-এর উচ্চারণ প্রকাশ পায়যেমনআঃ, উঃ, ওঃ, ছিঃ, বাঃ পদের শেষে বিসর্গ (ঃ) ব্যবহার হবে নাযেমনধর্মত, কার্যত, আইনত, ন্যায়ত, করত, বস্তুত, ক্রমশ, প্রায়শ ইত্যাদিপদমধ্যস্থে বিসর্গ ব্যবহার হবেযেমনঅতঃপর, দুঃখ, স্বতঃস্ফূর্ত, অন্তঃস্থল, পুনঃপুন, পুনঃপ্রকাশ, পুনঃপরীক্ষা, পুনঃপ্রবেশ, পুনঃপ্রতিষ্ঠা ইত্যাদিঅর্ধ শব্দকে পূর্ণতা দানে অর্থাৎ পূর্ণ শব্দকে সংক্ষিপ্ত রূপে প্রকাশে বিসর্গ ব্যবহার করা হলেও আধুনিক বানানে ডট ( . ) ব্যবহার করা হচ্ছেযেমনডাক্তার>ডা. (ডাঃ), ডক্টর>ড. (ডঃ), লিমিটেড> লি. (লিঃ) ইত্যাদিবিসর্গ যেহেতু বাংলা বর্ণ এবং এর নিজস্ব ব্যবহার বিধি আছেতাই এ ধরনের বানানে (ডাক্তার>ডা., ডক্টর>ড., লিমিটেড> লি.) বিসর্গ ব্যবহার বর্জন করা হয়েছেকারণ বিসর্গ যতিচিহ্ন নয়
[
সতর্কীকরণ: বিসর্গ (ঃ)-এর স্থলে কোলন ( : ) কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে নাযেমনঅত:পর, দু:খ ইত্যাদিকারণ কোলন ( : ) কোনো বর্ণ নয়, চিহ্নযতিচিহ্ন হিসেবে বিসর্গ (ঃ) ব্যবহার যাবে নাযেমননামঃ রেজা, থানাঃ লাকসাম, জেলাঃ কুমিল্লা, ১ঃ৯ ইত্যাদি।]
বিসর্গসন্ধি:
বিসর্গ (ঃ )-এর সঙ্গে স্বরধ্বনি কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গসন্ধি বলেউচ্চারণের দিক থেকে বিসর্গ দু রকম :
১. র্ -জাত বিসর্গ : শব্দের শেষে র্ থাকলে উচ্চারণের সময় র্ লোপ পায় এবং র্-এর জায়গায় বিসর্গ (ঃ) হয়উচ্চারণে র্ বজায় থাকেযেমনঅন্তর>অন্তঃ+গত=অন্তর্গত ( অন্‌তোর্‌গতো)
২. স্-জাত বিসর্গ : শব্দের শেষে স্ থাকলে সন্ধির সময় স্ লোপ পায় এবং স্-এর জায়গায় বিসর্গ ( ঃ ) হয়উচ্চারণে স্ বজায় থাকেযেমন : নমস্ > নমঃ + কার = নমস্কার ( নমোশ্‌কার্‌)
বিসর্গসন্ধি দু-ভাবে সাধিত হয় : ১. বিসর্গ ( ঃ ) ও স্বরধ্বনি মিলে; ২. বিসর্গ ( ঃ ) ও ব্যঞ্জনধ্বনি মিলে
১. বিসর্গ ও স্বরধ্বনির সন্ধি:
ক. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে অ-ধ্বনি থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি স্থলে ও-কার হয়যেমন
ততঃ + অধিক = ততোধিক
যশঃ + অভিলাষ = যশোভিলাষ
বয়ঃ + অধিক = বয়োধিক
খ. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে অ, , উ-ধ্বনি থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি মিলে র হয়যেমন
পুনঃ + অধিকার = পুনরধিকার
প্রাতঃ + আশ = প্রাতরাশ
পুনঃ + আবৃত্তি = পুনরাবৃত্তি
পুনঃ + উক্ত = পুনরুক্ত
২. বিসর্গ ও ব্যঞ্জনধ্বনির সন্ধি
ক. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে বর্গের ৩য়/ ৪র্থ/ ৫ম ধ্বনি অথবা য, , , হ থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি স্থলে র-জাত বিসর্গে র/ রেফ (র্) এবং স-জাত বিসর্গে ও-কার হয়যেমন
র-জাত বিসর্গ : র্
অন্তঃ + গত = অন্তর্গত
পুনঃ + জন্ম = পুনর্জন্ম
অন্তঃ + ধান = অন্তর্ধান
পুনঃ + বার = পুনর্বার
অন্তঃ + ভুক্ত = অন্তর্ভুক্ত
পুনঃ + মিলন = পুনর্মিলন
স-জাত বিসর্গ : ও
মনঃ + গত = মনোগত
সদ্যঃ + জাত = সদ্যোজাত
তিরঃ + ধান = তিরোধান
তপঃ + বন = তপোবন
অধঃ + মুখ = অধোমুখ
মনঃ + যোগ = মনোযোগ
মনঃ + রম = মনোরম
মনঃ + লোভা = মনোলোভা
মনঃ + হর = মনোহর
খ. বিসর্গের পরে চ/ছ থাকলে বিসর্গের স্থলে শ; ট/ঠ থাকলে ষ এবং ত/থ থাকলে স হয়যেমন
নিঃ + চয় = নিশ্চয়
দুঃ + চরিত্র = দুশ্চরিত্র
ধনুঃ + টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার
নিঃ + ঠুর = নিষ্ঠুর
চতুঃ + টয় = চতুষ্টয়
দুঃ + তর = দুস্তর
নিঃ + তেজ = নিস্তেজ
ইতঃ + তত = ইতস্তত
দুঃ + থ = দুস্থ
গ. অ/আ ভিন্ন অন্য স্বরের সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে স্বরধ্বনি, বর্গের ৩য় / ৪র্থ / ৫ম ধ্বনি অথবা য, , , হ থাকলে বিসর্গ স্থলে র হয়যেমন
নিঃ + অবধি = নিরবধি
নিঃ + আপদ = নিরাপদ
নিঃ + গত = নির্গত
নিঃ + ঘণ্ট = নির্ঘণ্ট
নিঃ + বাক = নির্বাক
নিঃ + ভয় = নির্ভয়
আবিঃ + ভাব = আবির্ভাব
আশীঃ + বাদ = আশীর্বাদ
দুঃ + অবস্থা = দুরবস্থা
দুঃ + আচার = দুরাচার
দুঃ + গতি = দুর্গতি
দুঃ + বোধ = দুর্বোধ
প্রাদুঃ + ভাব = প্রাদুর্ভাব
দুঃ + মর = দুর্মর
দুঃ + যোগ = দুর্যোগ
দুঃ + লভ = দুর্লভ
ঘ. র-জাত বিসর্গের পরে র থাকলে বিসর্গ লোপ পায় এবং প্রথমে ই-কার থাকলে তা ঈ-কার হয়যেমন
নিঃ + রব = নীরব
নিঃ + রস = নীরস
নিঃ + রোগ = নীরোগ
ঙ. অ/আ ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে ক, , , ফ থাকলে বিসর্গ স্থলে স হয়যেমন
নমঃ + কার = নমস্কার
তিরঃ + কার = তিরস্কার
পুরঃ + কার = পুরস্কার
ভাঃ + কর = ভাস্কর
চ. ই/উ ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে ক, , , ফ থাকলে বিসর্গ স্থলে ষ হয়যেমন
নিঃ + কাম = নিষ্কাম
নিঃ + পাপ = নিষ্পাপ
নিঃ + ফল = নিষ্ফল
বহিঃ + কার = বহিষ্কার
চতুঃ + পদ = চতুষ্পদ
চতুঃ + কোণ = চতুষ্কোণ
ছ. কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্ধির বিসর্গ লোপ পায় নাযেমন
প্রাতঃ + কাল = প্রাতঃকাল
মনঃ + কষ্ট = মনঃকষ্ট
শিরঃ + পীড়া = শিরঃপীড়া
অন্তঃ + করণ = অন্তঃকরণ
৪২. ম-ফলা ও ব-ফলার উচ্চারণ:
ম-ফলার উচ্চারণ:
ক. পদের প্রমে ম-ফলা থাকলে সে বর্ণের উচ্চারণে কিছুটা ঝোঁক পড়ে এবং সামান্য নাসিক্যস্বর হয়যেমনশ্মশান ( শঁশান্), স্মরণ (শঁরোন্)
কখনো কখনো অনুচ্চারিত থাকতে ও পারেযেমনস্মৃতি (সৃতি বা সৃঁতি)
খ. পদের মধ্যে বা শেষে ম-ফলা যুক্ত হলে উচ্চারণে সে বর্ণের দ্বিত্ব হয় এবং সামান্য নাসিক্যস্বর হয়যেমনআত্মীয় (আত্‌তিঁয়), পদ্ম (পদ্‌দোঁ), বিস্ময় (বিশ্‌শঁয়), ভস্মস্তূপ (ভশ্‌শোঁস্‌তুপ্‌), ভস্ম (ভশ্‌শোঁ), রশ্মি (রোশ্‌শিঁ)
গ. গ, , , , , বা ল বর্ণের সঙ্গে ম-ফলা যুক্ত হলে, ম-এর উচ্চারণ বজায় থাকেযুক্ত ব্যঞ্জনের প্রথম বর্ণের স্বর লুপ্ত হয়যেমনবাগ্মী (বাগ্‌মি), যুগ্ম (যুগ্‌মো), মৃন্ময় (মৃন্‌ময়), জন্ম (জন্‌মো), গুল্ম (গুল্‌মো)
ব-ফলার উচ্চারণ:
ক. শব্দের প্রমে ব-ফলা যুক্ত হলে উচ্চারণে শুধু সে বর্ণের উপর অতিরিক্ত ঝোঁক পড়েযেমনক্বচিৎ (কোচিৎ), দ্বিত্ব (দিত্‌তো), শ্বাস (শাশ্), স্বজন (শজোন), দ্বন্দ্ব (দন্‌দো)
খ. শব্দের মধ্যে বা শেষে ব-ফলা যুক্ত হলে যুক্ত ব্যঞ্জনটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়যেমনবিশ্বাস (বিশ্‌শাশ্), পক্ব (পক্‌কো), অশ্ব (অশ্‌শো)
গ. সন্ধিজাত শব্দে যুক্ত ব-ফলায় ব-এর উচ্চারণ বজায় থাকেযেমনদিগ্বিজয় (দিগ্‌বিজয়), দিগ্বলয় (দিগ্‌বলয়)
ঘ. শব্দের মধ্যে বা শেষে বা ’-এর সঙ্গে ব-ফলা যুক্ত হলে ব-এর উচ্চারণ বজায় থাকেযেমনতিব্বত (তিব্‌বত). লম্ব (লম্‌বো)
ঙ. উৎ উপসর্গের সঙ্গে ব-ফলা যুক্ত হলে ব-এর উচ্চারণ বহাল থাকেযেমনউদ্বাস্তু (উদ্‌বাস্‌তু), উদ্বেল (উদ্‌বেল্‌)
[দ্রষ্টব্য: আমাদের অবশ্যই বাংলা বানান ও বাংলা বানানের উচ্চারণ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবেকারণ বাংলা বানান ও উচ্চারণের পার্থক্য রয়েছেযেমনআছ (আছো), দেখা (দ্যাখা), একা (অ্যাকা) ইত্যাদি।]

No comments

Powered by Blogger.